ইউপি নির্বাচন নিয়ে আ’লীগে দুই মত!

ডেস্ক রিপোর্ট •

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা দেওয়া শেষ হবে।

৮ অথবা ৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং এই মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মনোনয়নের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। এবারের মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেকগুলো পরিবর্তন আনা হয়েছে।

গতবছর যেমন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল এবার তেমনটি চাওয়া হয়নি। এবার শুধুমাত্র যারা আগ্রহী তাদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় পরিবর্তন যেটি হয়েছে, এইবার মনোনয়ন ফরম দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অনেকটা উদার হয়েছেন এবং এবার এটি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি যথারীতি অংশগ্রহণ করছে না। ফলে এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি মত রয়েছে।

প্রথমত, আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই মনে করছে যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি যেহেতু বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না, এই নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হয় এইজন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যারা নির্বাচন করতে চায় তারা নির্বাচন করতে পারবে, দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এবং সেক্ষেত্রে দলীয় কোনো প্রার্থীও মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে যে একটি অনীহা, সে অনীহা দূর হবে বলে আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন।

তবে এই নিয়ে ভিন্ন মতও আছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করছেন, এরকম সিদ্ধান্ত নিলে সারাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল আরো বেড়ে যাবে। এমনিতে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন নানামুখী কোন্দল প্রবল আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দলটি অত্যন্ত বেশি। এখন যদি আবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে এবং ভবিষ্যতে এটি আওয়ামী লীগের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়াও যারা উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিপক্ষে তারা মনে করছেন যে, দলীয় আনুগত্য ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে যদি কেউ দাঁড়ায় তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে তাদেরকে রাখা কঠিন হবে।

তবে গতবার দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তৃণমূল থেকে অনেক হাইব্রিড সুবিধাভোগীদের নাম পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভাবে বাছ-বিচার করা যায়নি। ফলে অনেক জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা ব্যক্তি আওয়ামী লীগের টিকিটে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার যেন সেই পরিস্থিতি না হয় সেজন্য শুরু থেকেই সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্থানীয় পর্যায়ে থেকে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলেছেন। তবে স্থানীয় পর্যায়ের নাম এবার বিবেচ্য নয় বলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেছেন। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন যে, আমরা সারাদেশের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে যে সমস্ত এলাকায় নির্বাচন হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এই তথ্য যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বলা হয়েছিল, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয় তাহলে তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। আর তিনি নৌকা প্রতীক পাবেন না। কিন্তু বহু বিদ্রোহী প্রার্থী স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও সেই ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না নানা বাস্তবতায়।

এরকম পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যদি দলীয় প্রার্থী দেয় তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে এবং এই বিদ্রোহী প্রার্থী দমন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কাজেই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কি করবে সেটা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্ধান্তের উপর।